তৃণমূল বিধায়কের ঘনিষ্ট ভাইপোর হাতে খুন হবার আশঙ্কা : আত্মগোপনে বৃদ্ধ মুখ‍্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ

22nd June 2020 11:48 pm বর্ধমান
তৃণমূল বিধায়কের ঘনিষ্ট ভাইপোর হাতে খুন হবার আশঙ্কা :  আত্মগোপনে বৃদ্ধ মুখ‍্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ


বাবু সিদ্ধান্ত  ও পার্থ ব‍্যানার্জী ( মেমারী ) : সম্পত্তি হাতানোর জন্য বৃদ্ধ কাকাকে মারধোর  করে নানা কাগজে সই করিয়ে নেবার অভিযোগ উঠেছে বিধায়ক ঘনিষ্ট ভাইপোর  বিরুদ্ধে। পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পৌরসভার হাটপুকুর এলাকার ঘটনা।ভাইপো রামশঙ্কর চক্রবর্তীর হাতে খুন হয়েযাবার আশঙ্কা করে বাড়ি ঘর ছেড়ে বৃদ্ধ পিযুষকান্তি চক্রবর্তী অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন ।আত্মগোপন করে থাকা অবস্থাতেই ভাইপোর কুকীর্তির সবিস্তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে  সুবিচার প্রার্থনা করেছেন বৃদ্ধ।পাল্টা বৃদ্ধর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে প্রতারণার মামলা।পুলিশ সমস্ত অভিযোগের তদন্ত শুরু করলেও ভাইপোর অত্যাচার থেকে আদৌ নিস্কৃতি মিলবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন বৃদ্ধ । 

মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে পীযূষবাবুর দাবি, করেছেন তাঁর বয়স ৭০ বছর । তিনি জানিয়েছেন ২০১১ সাল থেকে তিনি ও তাঁর অবিবাহিত বয়স্ক ভাই গুরুচরন নির্যাতনের শিকার  হচ্ছেন । তদানিন্তন জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও চঠিতে অত্যাচারের ঘটনা জানানো হয় । মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে পীযূষকান্তি বাবু  বলেছেন , “ইতিপূর্বেও ভাইপোর অত্যাচার ও মারধোরের হাতথেকে মুক্তি পাবার জন্য তিনি মূখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে ডিজির কাছে পাঠানো হয়। ডিজি তাঁর কথা শুনে মেমারির থানার ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডিজির নির্দেশ মেনে মেমারি থানার ওসি উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন ।  বৃদ্ধ পীযূষকন্তি  বাবু বলেন ,এরপর কিছু দিন তিনি শান্তিতে থাকতে পারলেও পরে ফের  তাঁর উপর একইরকম ‘অত্যাচার’ শুরু হয়। সম্পত্তি কেড়ে নেবার জন্য বেপরোয়া মারধোর করে নানা কাগজে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয় ।পীযূষকান্তি বাবুর অভিযোগ ,একই  কারণে তাঁর  বয়স্ক ভাই গুরুচরণ চক্রবর্তীও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । ভাইপোর মারধোর অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় তিনি খুন হয়েযাবার আশঙ্কায়  ‘আত্মগোপন’ করে থাকতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।  পীযূষকান্তি বাবু  জানান  ,তাঁদের  যৌথ পরিবারের  কারখানার সমস্ত মালপত্র, , যন্ত্রপাতি, আচ্ছাদন কাঠ, ব্লোয়ার, গাড়ি ডিজেল ইঞ্জিন ইত্যাদি সবকিছু বিক্রি করেদেওয়া  হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ তিনি করাতে তাঁকে  রামশঙ্কর চক্রবর্তী-সহ অপর আরো দুই ভাইপো প্রাণে মারার হুমকি দেয়। তা নিয়ে তিনি থানায় জানানোর পর থেকে  তাঁর উপর ধারাবাহিকভাবে মারধোর অত্যাচার চলতে থাকে  ।চিঠিতে পীযূষকান্তি বাবু মুখ্যমন্ত্রীকে  আরও  জানিয়েছেন, তাঁর ভাইপো রামশঙ্কর মেমারির বিধায়ক নার্গিস বেগমের বিশেষ ঘনিষ্ঠ। রামশঙ্করের নামে থাকা একটি দামি চারচাকা গাড়ি বিধায়ক চাপেন । রামশঙ্কর  আবার পালশিট টোলপ্লাজার তৃণমূল শ্রমিক  ইউনিয়নের নেতা ।নেতা হবার  সুবাদে  রামশঙ্কর  মাঝেমধ্যেই  মাঝরাতে বেশ কিছু ছেলে নিয়েএসে  তার  শোবার ঘরে তালা-চাবি মেরে দেয়। শোবার ঘরে তালাচাবি মেরে দেবার কারণে তাঁদের বাইরে রাত কাটাতে হয়। পীযূষকান্তি বাবু বলেন ,২০১৬ সালে তাঁদের বাড়ির  একাংশে বিধায়ক নার্গিস বোগমের  অফিস করে দিয়েছে রামশঙ্কর। বিধায়ক ঘনিষ্ট হওয়ায়  রামশঙ্কর বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায়  ‘আমার হাতে বিধায়ক রয়েছে, কেউ কিছু করতে পারবে না’। আর বাস্তবে সেটাই হচ্ছে ।”
  ছবি : এমএলএ কার্যালয় 

মেমারির বিধায়ক নার্গিস বেগম যদিও  রামশঙ্করের সঙ্গে ঘনিষ্টতা থাকার  কথা মেনে নিয়েই বলেন ‘ কারুর পারিবারিক বিবাদে আমার কি ভূমিকা থাকতে পারে ?এই বিষয়ে তিনি রামশঙ্করের সঙ্গে কথা বলার উপদেশ দেন বিধায়ক । রামশঙ্কর যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন । 

 

বৃদ্ধ পীযূষকান্তি চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে আবার  পাল্টা অভিযোগ করেছেন মেমারি নাবাসী নীলকমল সরকার, মনোজ রায়-সহ চারজন। তঁদের অভিযোগ,‘একটি জমি কেনার ব্যাপারে পীযূষকান্তিবাবু-সহ আটজনের সঙ্গে তাঁরা চুক্তিবদ্ধ  হয়েছিলেন। ওই জমির দাম নির্ধারণ হয়  ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা ।  তার মধ্যে ৩৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা তাঁদের দেওয়া হয়ে গিয়েছে । এরপর থেকে হঠাৎ করেই পীযূষাকান্তি বাবু গা ঢাকা দিয়েদেন । ’যদিও পীযূষকান্তি বাবু জানিয়েছেন, ‘তাঁর মালিকাধীন সম্পত্তিগুলি জোর পূর্বক  লিখিয়ে নেওয়া হয় । ওই সব কাগজে তিনি সই করতে না চাওয়ায়  তাঁকে রাতের পর রাত দরজায় চাবি দিয়ে বারান্দায় বসিয়ে রেখে মারধর করতো ভাইপো রামশঙ্কর একই সঙ্গে পীযূষকান্তি বাবু বলেন তাঁকে নামমাত্র টাকা দিয়ে  ওই  জমির মূল্যের বাকি টাকা রামশঙ্কর সহ অন্যরা আত্মসাৎ করে নিয়েছে ।’ যদিও পীযূষকান্তি বাবুর  এই সব অভিযোগ মানতে চায়ননি  রামশঙ্করবাবু। তাঁর বক্তব্য  “ তাঁর বাবার অগাধ  সম্পত্তি  রয়েছে । সেই  সম্পত্তি কি ভাবে ব্যবহার করবেন  সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্য কারুর  সম্পত্তি দখল করার স্প্রীহা তাঁর নেই । আশলে  পীযূষকান্তি বাবু  নানাজনের সঙ্গে প্রতারণা করে গা ঢাকা দিয়ে থেকে এখন  মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছেন “। 

ছবি :  কারখানার জায়গায় বালি মজুত করেছে রামশঙ্কর

জেলা  পুলিশের এক  কর্তা বলেন, “পারিবারিক বিবাদের বিষয়টি নিয়ে রবিবার দু’টি অভিযোগ  আমাদের কাছে এসেছে। দু’টি চিঠির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে ।“ 

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।